আজ শনিবার, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাতীবান্ধায় হাসপাতাল থেকে ফিরেও এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না জান্নাতুন নাহার

হাতীবান্ধায় হাসপাতাল

হাতীবান্ধায় হাসপাতাল

হাতীবান্ধায় হাসপাতাল থেকে ফিরেও এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না জান্নাতুন নাহার

হাসান মাহমুদ,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে জান্নাতুন নাহার। ফলে দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেখান গিয়ে কিছুটা সুস্থতার পর ফের পরীক্ষা কেন্দ্র ছুটে যায় মেয়েটি। কিন্তু সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে মেয়েটির পরীক্ষা দেয়ার জন্য আকুতি- মিনতি জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে না পেরে বাড়িতে ফিরে প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পড়ে জান্নাতুন। বারবার শুধু বিলাপ করে বলছে- কি অপরাধ আমার? ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে।
এ বছর উপজেলার কেতকীবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে জান্নাতুন নাহার। বাবা আতিয়ার রহমান অনেক কষ্ট করে তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগান। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে জ্বরের সাথে যুদ্ধ করেও যে, তার মেয়ে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে হেরে যাবেন- তা জানা ছিল না তার। ফলে মেয়ের জীবন থেকে একটি বছর ঝড়ে গেলে ভবিষ্যতে তার বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকাই করছেন বাবা আতিয়ার রহমান।
মেয়েটির বাবা আতিয়ার রহমান বলেন, এতকিছুর পরেও পরীক্ষা দিতে না পেরে প্রচন্ড কান্না কাটি করার কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে জান্নাতুন নাহার। তাই তাকে বর্তমানে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওই পরীক্ষার্থীর ভাষ্য মতে, জ্বরের কারণে মঙ্গলবার সকাল ৭ টার দিকে হালকা কিছু খাবার খেয়েছিল সে। পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন পেটে কিছু ছিল না। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক খালি পেটে তাকে একসাথে দুটো প্যারাসিট্যামল ট্যাবলেট খাইয়ে দিলে কিছুক্ষণ পর থেকে তার মাথা ঘোড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সে সঙ্গাহীন হয়ে পড়লে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরতরাই তাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে দ্রুত পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে যায় জান্নাতুন নাহার। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার হাতীবান্ধা উপজেলা মধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি।
জানতে চাইলে হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মাহাতাব উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এলে তাকে আবারও পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টাই করেছি । কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ কর্মকর্তারা এনিয়ে আপত্তি তোলার কারণে আমাদের আর কিছু করার ছিল না।”
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার হাতীবান্ধা উপজেলা মধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি হাসপাতাল থেকে এসে আবারও পরীক্ষা দিতে চাইলে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে জানাই। যেহেতু কোন পরীক্ষার্থী বাইরে গেলে আর পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবে না, সেহেতু ইউএনও‘র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে আর পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। একই কথা বলেন হাতীবান্ধা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম।
এদিকে একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীর উপর এমন কড়াকড়ি বিধিনিষেধের ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনেকেই হতবাক হয়েছেন। তাদের অনেকেই বলছেন, ‘মানুষ মাত্রই অসুস্থ হতে পারে। এক্ষেত্রে মেয়েটির তো কোন দোষ নেই। বরংচ মেয়েটির জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেলে ভবিষ্যতে তার মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে।” তাই তাকে আবারও পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অনেকেই।